
মোঃ মুকিম উদ্দিন জগন্নাথপুর উপজেলা প্রতিনিধি:-
বাংলাদেশের বিকল্প রাজনৈতিক ধারায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যুক্ত হলো, যখন সুনামগঞ্জ-৩ আসনের অন্যতম প্রভাবশালী ও আলোচিত নেতা সৈয়দ তালহা আলম আনুষ্ঠানিকভাবে এবি পার্টিতে যোগদান করলেন। গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের অংশ হিসেবে এই যোগদান কেবল একটি দলীয় সিদ্ধান্ত নয়—বরং এটি এবি পার্টির দীর্ঘমেয়াদি সাংগঠনিক ও নির্বাচনী কৌশলের জন্য একটি বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সৈয়দ তালহা আলমের এবি পার্টিতে অন্তর্ভুক্তি দলটির জন্য তিনটি স্তরে লাভজনক—তৃণমূল সংগঠন, নির্বাচনী বাস্তবতা এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্মাণ।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে সক্রিয় থাকা জগন্নাথপুরের জনতার চেয়ারম্যান খ্যাত তালহা আলম ইতোমধ্যেই একজন শক্ত অবস্থানের প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায় তার নিজস্ব সাংগঠনিক কাঠামো, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা এবং জনগণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা তাকে একটি আলাদা অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি কেবল বক্তৃতা বা বক্তব্যে সীমাবদ্ধ নন—দুর্যোগ, বন্যা, সামাজিক সংকট ও নাগরিক উদ্যোগে তার ধারাবাহিক উপস্থিতি তাকে একজন “ফিল্ড লিডার”-এ পরিণত করেছে। এছাড়াও রয়েছে তার পরীক্ষিত নিজস্ব ভোটার বেস।
এবি পার্টির জন্য এটি একটি বড় অর্জন, কারণ দলটি বরাবরই তৃণমূলভিত্তিক, নীতিনিষ্ঠ এবং বিকল্প রাজনীতির কথা বলে এসেছে। তালহা আলমের মতো একজন বাস্তব মাঠের নেতা যুক্ত হওয়ায় এবি পার্টি প্রথমবারের মতো সুনামগঞ্জ অঞ্চলে একটি কার্যকর ও প্রতিযোগিতামূলক উপস্থিতি গড়ে তোলার সুযোগ পেল।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, তালহা আলমের অতীত ভূমিকা এবি পার্টির আদর্শিক অবস্থানের সঙ্গে কৌশলগতভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। জুলাই বিপ্লব, যুগপৎ আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও নাগরিক আন্দোলনে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ তাকে তরুণ ভোটার, মধ্যবিত্ত সমাজ এবং পরিবর্তনকামী জনগোষ্ঠীর কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে। এই রাজনৈতিক পটভূমি এবি পার্টিকে কেবল একটি আদর্শিক দল নয়, বরং একটি বাস্তব নির্বাচনী শক্তিতে রূপান্তরিত করার সম্ভাবনা তৈরি করছে।
এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তালহা আলমের যোগদানের ফলে সুনামগঞ্জ জেলায় দলীয় সংগঠন পুনর্গঠন, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতৃত্ব সৃষ্টি এবং যুব ও স্বেচ্ছাসেবী কাঠামো শক্তিশালী করার একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এতে করে এবি পার্টি আগামী দিনে শুধু একটি আসনে নয়, পুরো জেলায় নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে পারবে।
অন্যদিকে, তালহা আলমের জন্যও এই সিদ্ধান্ত একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। এবি পার্টিতে যোগ দিয়ে তিনি একদিকে নিজের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পরিচয় বজায় রাখছেন, অন্যদিকে জাতীয় পর্যায়ের একটি সুসংগঠিত জোটের শক্তিকে কাজে লাগানোর সুযোগ পাচ্ছেন। এতে তার নির্বাচনী সক্ষমতা যেমন বাড়ছে, তেমনি জাতীয় রাজনীতিতে তার ভবিষ্যৎ ভূমিকার ক্ষেত্রও বিস্তৃত হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, এবি পার্টিতে সৈয়দ তালহা আলমের যোগদান সুনামগঞ্জের রাজনীতিতে একটি নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। এটি শুধু একটি দলবদল নয়—বরং এটি একটি বার্তা যে বিকল্প ও নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি এখন মাঠপর্যায়ে বাস্তব রূপ নিতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত এবি পার্টিকে দীর্ঘমেয়াদে একটি সংগঠিত ও প্রতিযোগিতামূলক শক্তিতে পরিণত করবে, আর তালহা আলমকে প্রতিষ্ঠিত করবে সুনামগঞ্জের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের অন্যতম প্রধান মুখ হিসেবে।