দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সর্বশেষ প্রস্তাবকে ‘অস্বাভাবিক’ বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবতা বিবর্জিত এবং বাংলাদেশের ইউনিটারি স্ট্রাকচার (একক সরকার কাঠামোর) সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের ১৩তম দিনের আলোচনা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, কমিশনের নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশের ৬৪টি জেলা থেকে সরাসরি ভোটে ৬৪ জন এবং ১২টি সিটি করপোরেশন থেকে ১২ জন নির্বাচিত হয়ে মোট ৭৬ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। বিষয়টিকে ‘জেলা পরিষদ বা প্রাদেশিক কাঠামোর আদলে’ তৈরি প্রস্তাব আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘এটি পূর্বে আলোচিত হয়নি এবং এটি মোটেও যুক্তিযুক্ত বা প্রয়োজনীয় নয়।’
নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা তো প্রভিন্সিয়াল (প্রাদেশিক) ধারণার মধ্যে যাচ্ছি না। আমরা ইউনিটারি টাইপ অব গভর্নমেন্ট (একক সরকার কাঠামো)। তাহলে এই ৭৬ জন সদস্যের ক্ষমতা বা কার্যপরিধি কী হবে? আবার সিটি করপোরেশনে তো আগে থেকেই একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন— তার সঙ্গে নতুন একজন প্রতিনিধি আনতে হবে কেন?’
দ্বিকক্ষ সংসদ সংক্রান্ত আলোচনায় এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা আমাদের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবে ইতিমধ্যে আপার হাউস গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল সমাজের বিভিন্ন সেক্টরে অবদান রাখা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতাকে রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্ত করা। সেই উদ্দেশ্যে প্রতিনিধিত্বমূলক একটি উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম।’
সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, উচ্চকক্ষের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি মোটামুটি ঐকমত্য আছে, তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে একমত হওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘কেউ বলছে, নিম্নকক্ষের আসন অনুপাতে প্রতিনিধি আসবে, কেউ বলছে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন হতে হবে। কমিশন এখন এসব প্রস্তাব পর্যালোচনা করবে।’
জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা নারী ক্ষমতায়ন ও প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর পক্ষে। এর ধারাবাহিকতায় বিএনপির পক্ষ থেকে বর্তমানে সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসন সংখ্যা ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা মনে করি, এই আসনগুলো নির্বাচিত হোক বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী বিদ্যমান পদ্ধতিতে।’ তিনি জানান, সরাসরি নারী আসনের জন্য নতুন করে ১০০টি সংসদীয় আসন নির্ধারণ করা বাস্তবভিত্তিক নয়।
কমিশনের প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে ৩৩ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা যে কথা বলা হয়েছে সে প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা এখনো আরপিও অনুযায়ী দলের বিভিন্ন কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখতে পারিনি। বাস্তবতা হলো, আমাদের সমাজে অধিকাংশ নারী ধর্মীয় ও সামাজিক কারণে সরাসরি রাজনীতিতে আসতে দ্বিধা অনুভব করেন। তাই আমরা ধাপে ধাপে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে চাই, ওভারনাইট কোনো বিপ্লবী পরিবর্তন নয়।’