
জগন্নাথপুরে স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন পাইলগাঁও জমিদার বাড়ি।
মোঃ মুকিম উদ্দিন জগন্নাথপুর প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে সাড়ে পাঁচ একর বেষ্টিত ভূমিতে তৈরি কালের সাক্ষী পাইলগাঁও জমিদারবাড়ি। কালের পরিক্রমায় ক্ষয়িষ্ণু বিশাল এই জমিদারবাড়িটি আজও সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের ধারক। ৩০০ বছরের অধিককালের স্মৃতিবিজড়িত এই জমিদারবাড়ির অবকাঠামো আজও মুগ্ধ করে ভ্রমণপ্রেমীদের। এটি পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণযোগ্য। বাড়ির সামনে বিশাল ‘মাধব রামের তালাব’ হিসেবে পরিচিত দিঘিতে হালকা ঢেউ চাঁদনী রাতে মোহনীয় পরিবেশের সৃষ্টি করে। পর্যটন সমৃদ্ধ ও প্রাচীন স্থাপনার কারুকার্যসমৃদ্ধ নির্মাণশৈলী চোখ জুড়ায়। বাড়িটিতে শেওলা বাসা বেঁধেছে। ঘরের ইটের টালি খসে খসে নিঃশেষ হচ্ছে। ঝোপ-জঙ্গলের ঠাঁই হয়েছে মন্দির ঘরে। পোকামাকড়, সাপ-বিচ্ছুর চলাফেরা, তার মধ্যেও ‘প্রত্নতাত্ত্বিক দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন।
সরেজমিন দেখা যায়, ৩০০ বছরের পুরোনো জমিদারবাড়িটি এই অঞ্চলের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। ভেতর বাড়ির পুকুর ঘাটটি অনেক সুন্দর। ক্ষয়িষ্ণু কাচারি ঘরের সমানের বিশাল ঘরটির সামনে শানবাঁধানো ঘাটটি যত্নের অভাবে নষ্ট। তবুও গ্রামের মানুষ নিশ্চিন্তে সাঁতার কেটে তৃপ্ত হয়। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁওয়ে সুবিশাল জমিদারবাড়ির দক্ষিণে কুশিয়ারা নদীর তীর থেকে কারুকাজ খচিত নকশায় নান্দনিকতার ছোঁয়া রয়েছে। বড় ঘরের ছাদে বিশাল লোহার পাত, যা প্রাচীন পুরাকীর্তির নিদর্শন। পাইলগাঁও জমিদার পরিবারের শেষ জমিদার ছিলেন ব্রজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ। তিনি সিলেট বিভাগের কংগ্রেস সভাপতি এবং আসাম আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। পাইলগাঁও জমিদারদের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। পাইলগাঁওসহ সমগ্র সিলেট বিভাগের শিক্ষা, সাহিত্য, রাজনীতি ও সমাজসেবায় ব্রজেন্দ্র নারায়ণের অবদান ছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেই খ্যাতনামা পুরুষদের চারণভূমি আজ প্রায় বিলীন হওয়ার পথে। তবে আশার কথা, দেরিতে হলেও ঐতিহাসক এই স্থাপনাটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পাইলগাঁও ইউনিয়নের পাইলগাঁও গ্রামের তৎকালীন জমিদার ব্রজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর বংশধরগণ ভারতে চলে গেলে বাড়ির জায়গা-জমি দখল করে নেয় এলাকার ভূমিখেকো চক্র। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে পুলিশ দখলকৃত জায়গার দেওয়াল ভেঙে জমিদারবাড়ির ৬৩ শতাংশ জায়গা দখলমুক্ত করেছেন। ‘যেহেতু জমিদার ব্রজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর শিক্ষার প্রতি অনুরাগ ছিল, তাই এ বাড়িটিতে নারী শিক্ষার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হলে, বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ হয়ে আরও সুন্দর হতো।