মোঃ মুকিম উদ্দিন জগন্নাথপুর প্রতিনিধিঃ-
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও জেলা জমিয়তের সহ-সভাপতি মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজিনগরীর খুনিদের গ্রেফতারের দাবীতে জগন্নাথপুর-সুনামগঞ্জ, দিরাই- সুনামগঞ্জ- সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
(এ ঘটনায় প্রশাসনের আশ্বাসে প্রায় ৫০ মিনিট পর তারা সড়ক ছেড়ে দেন।)
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এর ব্যানারে দিরাই রাস্তা পয়েন্ট অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন জমিয়ত নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও এলাকার বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।
প্রসঙ্গত মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজিনগরী বিগত ২রা সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন এবং বিগত ৫ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৮ টায় দিরাই উপজেলার শরিফপুর বাট্রা এলাকায় নদীতে ভাসমান লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরে পুলিশ খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে।
এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার বিকাল ৩ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত সিলেট—সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের দিরাই রাস্তার পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করেন জমিয়ত নেতা ও স্থানীয় লোকজন। এতে দুই পাশে হাজারো যানবাহন আটকে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। যানজট নিরসন হতে সময় লাগে আরো প্রায় ১ ঘন্টা। এসময় জেলা শহর সুনামগঞ্জ ও উপজেলা শহর দিরাইর সাথে সরাসরি সড়ক পথ বন্ধ হয় সারা দেশের। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন যানজটে আটকে থাকা হাজার হাজার যাত্রী সাধারণ। বিকাল ৫টায় কেন্দ্রীয় জমিয়তের মহাসচিব মাও. মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দির আশ্বাস ও নির্দেশনায় এ অবরোধ সাময়িক স্থগিত করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। কর্মসূচি স্থগিতের আগে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি ‘আল্টিমেটাম’ দিয়ে তারা বলেন, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি আসামিদের খুঁজে বের করে গ্রেফতার করা না হয় তাহলে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় জমিয়ত। ঢাকা থেকে আসবে কর্মসূচি।
বিক্ষোভ কর্মসূচির পথসভা সঞ্চালনা করেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মাও. রমজান হোসাইন। কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন— আগামী সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ—৩ আসনে জমিয়তের মনোনয়ন প্রত্যাশী মাও. হাম্মাদ আহমদ গাজীনগরী, সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মাও. তয়্যিবুর রহমান চৌধুরী, আগামী সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ—৪ আসনে জমিয়তের মনোনয়ন প্রত্যাশী মাও. মখলিছুর রহমান চৌধুরী, শান্তিগঞ্জ উপজেলা জমিয়তের সভাপতি মাও. ইলিয়াছ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মাও. আবদুল হাই, জেলা জমিয়তের সহ—সাংগঠনিক সম্পাদক মোক্তার হোসেন চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য মাও. মিজানুর রহমান ও মুফতি আবদুল মালিক ত্বোহাসহ আরো অনেকে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা আইন রক্ষাকারী প্রশাসনের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বিক্ষুব্ধ বক্তারা বলেন, প্রশাসনের প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নেই। মাও. মুস্তাক আহমদ একজন নির্বিবাদী মানুষ ছিলেন। অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ এই মানুষটি জমিয়তের একজন নিবেদিত নেতা ছিলেন। তাঁর খুনিদের খুঁজে বের করতে পুলিশ টালবাহানা করছে। তারা চাইলেই এই খুনের রহস্য খুব তাড়াতাড়ি উদঘাটন করতে পারে, কিন্তু করছে না। আমরা কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে বলে দিতে চাই, যদি আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে খুনিদের খুঁজে বের করে গ্রেফতার করা না হয় তাহলে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নেই, তাই তাদের আশ্বাসে নয়— আমাদের (জমিয়তের) কেন্দ্রীয় মহাসচিবের নির্দেশে আজকে আপাতত এই কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হলো। পরবর্তীতে কেন্দ্র থেকে যে কর্মসূচি আসবে তা পালন করবে স্থানীয় জমিয়ত ও জনতা। কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন হাম্মাদ আহমদ গাজীনগরী ও মাও. তৈয়্যিবুর রহমান চৌধুরী।
সরেজমিন রবিবার বিকাল ৩টার আগেই ব্লকেড কর্মসূচি পালন করতে সুনামগঞ্জ সদর, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, দিরাই, শান্তিগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে দিরাই রাস্তার মুখে আসতে থাকেন জমিয়ত নেতা—কর্মীরা। কর্মসূচির সূচনা হলে যোগ দেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ। দিরাই রাস্তা, সিলেট—সুনামগঞ্জ সড়কের উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটার জায়গায় যানবাহন আটকে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। এসময় এম্বুল্যান্স আটকে থাকলেও লাশবাহী একটি লেগুনাকে ছেড়ে দেন অবরোধকারীরা। বিভিন্ন ইউনিটে বিভক্ত হয়ে ‘আমার ভাইয়ের রক্ত লাল, প্রশাসন কার দালাল, আমার ভাই কবরে, খুনি কেনো বাহিরে ?’ এমন জ্বালাময়ী শ্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। বিভিন্ন দিক থেকে মিছিল আসে বিক্ষোভস্থলে। সুনামগঞ্জ—সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের দিরাই রাস্তার মুখের উভয় পাশে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দেন আন্দোলনকারীরা।
জমিয়তের সাথে বিক্ষুব্ধ জনতার দাবি, যত দ্রুত সম্ভব খুনীদর খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা।