মোঃ নাজমুল ইসলাম, প্রতিনিধি, আওয়াজ সিলেট:-
রবিবার (৩১ আগস্ট) গভীর রাতে পূর্ব আফগানিস্তানের ব্যস্ত শহর জালালাবাদের কাছে ৬.০ মাত্রার একটি ভূমিকম্প ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে এবং শত শত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। তালেবান-নেতৃত্বাধীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এতে ৬২২ জন নিহত হয়েছেন এবং ১,৫০০ জন আহত হয়েছেন।
পাকিস্তান সীমান্তবর্তী পূর্ব আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে বহু গ্রাম ধ্বংস হয়েছে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি কমপক্ষে ৬২২ জনের মৃত্যু ও ১,৫০০ জনের বেশি আহত হওয়ার খবর সোমবার জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ ।
রবিবার গভীর রাতে এই ভূমিকম্পটি কুনার প্রদেশের একাধিক শহরে আঘাত হানে, যা পার্শ্ববর্তী নানগারহার প্রদেশের জালালাবাদ শহরের নিকটবর্তী। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (US Geological Survey) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে ৬.০ মাত্রার ভূমিকম্পটি জালালাবাদ শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার (১৭ মাইল) পূর্ব-উত্তর-পূর্বে কেন্দ্রীভূত ছিল এবং এর গভীরতা ছিল মাত্র ৮ কিলোমিটার (৫ মাইল)। সাধারণত এমন অগভীর ভূমিকম্পে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়।
কুনার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নুর গুল, সোকি, ওয়াতপুর, মানোগি ও চপাদারে জেলায় অন্তত ২৫০ জন নিহত এবং ৫০০ জন আহত হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফত জামান বলেন, “উদ্ধার কার্যক্রম এখনো চলছে, এবং একাধিক গ্রাম সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে। শহীদ ও আহতদের সংখ্যা পরিবর্তিত হচ্ছে। কুনার, নানগারহার এবং রাজধানী কাবুল থেকে মেডিকেল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।”
তিনি বলেন, অনেক এলাকায় এখনো হতাহতদের সঠিক তথ্য পৌঁছেনি এবং “সংখ্যা আরও বাড়তে পারে” বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কাছাকাছি শহর জালালাবাদ পাকিস্তানের সীমানা নিকটে অবস্থিত হওয়ায় একটি ব্যস্ত বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং দুই দেশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পথ। পৌরসভার হিসেব অনুযায়ী শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ হলেও, পুরো মহানগর এলাকার জনসংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করা হয়। এর অধিকাংশ ভবনই একতলা বা দুইতলা কংক্রিট ও ইট দিয়ে তৈরি, এবং শহরের আশেপাশের এলাকাগুলোতে কাঁচা মাটির ইট ও কাঠ দিয়ে নির্মিত ঘরবাড়ি রয়েছে। এসব ভবনের নির্মাণ মান অনেকটাই দুর্বল।
জালালাবাদে কৃষিকাজও ব্যাপক, বিশেষ করে লেবু জাতীয় ফল এবং ধান চাষ প্রচুর হয়, কারণ কাবুল নদী শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এই দুর্যোগ দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির উপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে, যা ইতোমধ্যেই মানবিক সংকটের মধ্যে পড়েছে — আন্তর্জাতিক সাহায্য হ্রাস এবং প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে নিজ নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর কারণে।
আফগানিস্তান প্রায়ই প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে আক্রান্ত হয়, বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালায়, যেখানে ভারতীয় এবং ইউরেশীয় টেকটনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল, যার পরপরই শক্তিশালী আফটারশক (পরবর্তী কম্পন) হয়। তালেবান সরকার তখন জানিয়েছিল যে কমপক্ষে ৪,০০০ জন প্রাণ হারিয়েছে।