সিলেট প্রতিনিধি |
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সাদা পাথর উত্তোলন নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক ও জনমতের চাপে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহারকে বদলি করা হয়েছে। সোমবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বদলি করা হয়।
আজিজুন্নাহারের বদলির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কেউ কেউ প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও অনেকে এটিকে “চাপের মুখে নেওয়া প্রতিক্রিয়াশীল পদক্ষেপ” বলে মন্তব্য করেছেন।
সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিও: বিতর্কের মূল কেন্দ্রবিন্দু সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়—ভোলাগঞ্জ সীমান্তবর্তী এলাকায় ইউএনও আজিজুন্নাহার আনসার সদস্যদের সঙ্গে উপস্থিত থাকলেও তার সামনেই অবৈধভাবে সাদা পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। ভিডিওটি ভাইরাল হলে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়।
তদন্ত কমিটিতে অভিযুক্ত ইউএনও: স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও, বিস্ময়ের বিষয় হলো—তথাকথিত “অবহেলার” অভিযোগে যিনি আলোচনার কেন্দ্রে, সেই ইউএনও আজিজুন্নাহারকেই কমিটির সদস্য করা হয়। এতে তদন্তের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয় বিভিন্ন মহলে।
দুদক ও প্রশাসনিক তদন্তে অসন্তোষের ইঙ্গিত ঘটনার প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তাদের প্রতিবেদনে স্থানীয় প্রশাসনের ‘উদাসীনতা ও পর্যাপ্ত পদক্ষেপের অভাব’ তুলে ধরা হয়।
জনমতের প্রতিফলন নাকি চাপের কাছে নতি স্বীকার?
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের অনেকেই মনে করছেন, “এটি জনচাপের প্রেক্ষিতে নেওয়া একটি প্রতীকী সিদ্ধান্ত। তবে প্রকৃত দায়ীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে এর পুনরাবৃত্তি হবেই।”
অন্যদিকে ইউএনও আজিজুন্নাহারের পক্ষের একজন কর্মকর্তা বলেন, “তিনি একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। পুরো বিষয়টিই একটি ষড়যন্ত্রের অংশ। তাকে সময় দিলে তিনি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারতেন।”
সাদা পাথর লুট ও প্রশাসনিক দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইউএনও বদলি ঘটনাটি শুধু একজন কর্মকর্তার অপসারণ নয়—এটি স্থানীয় প্রশাসনের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার প্রশ্নেও নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ভবিষ্যতে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনা না হলে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত হয়তো কেবল জনমত ঠেকানোর সাময়িক কৌশল হিসেবেই বিবেচিত হবে।