লন্ডন, ১৬ অক্টোবর: নেট মাইগ্রেশন কমানোর লক্ষ্য নিয়ে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ দক্ষ কর্মী ও তাদের নির্ভরশীলদের জন্য ভিসা নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে দক্ষ কর্মী ও তাদের ওপর নির্ভরশীলদের ইংরেজি ভাষায় এ-লেভেল সমতুল্য (বি-টু) দক্ষতা প্রদর্শন করতে হবে।
এই নিয়ম আগামী জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এর ফলে অভিবাসী পরিবারগুলোর মধ্যে তীব্র উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, কারণ ইংরেজি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ কোর্সের খরচ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে হবে — কোনও সরকারি সহায়তা থাকবে না। ফলে হাজার হাজার পাউন্ডের অতিরিক্ত আর্থিক চাপ আসবে তাদের কাঁধে।
আগে দক্ষ কর্মীদের জন্য ইংরেজি দক্ষতার ন্যূনতম মান ছিল জিসিএসই-সমতুল্য (বি-ওয়ান), যা এখন সরাসরি বি-টু স্তরে উন্নীত করা হয়েছে। এর অর্থ, আবেদনকারীদের এখন ‘স্বচ্ছন্দ ও কার্যকরভাবে’ ইংরেজি ব্যবহার করতে জানতে হবে — যা আগের মানদণ্ডের তুলনায় অনেক কঠিন।
সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে কর্মী ও শিক্ষার্থীদের প্রাপ্তবয়স্ক নির্ভরশীলদের ওপর। এবারই প্রথম, তাদের ভিসার আবেদনের সময় অন্তত এ-ওয়ান স্তরের ইংরেজি জ্ঞান আবশ্যক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যারা যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস (সেটেলমেন্ট) করতে চাইবেন, তাদের জন্যও বি-টু স্তরের ইংরেজি দক্ষতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
হোম অফিস অনুমোদিত ইংরেজি পরীক্ষা (SELT) উত্তীর্ণ হতে কয়েকশ পাউন্ড খরচ হবে। তবে প্রকৃত চ্যালেঞ্জ হলো, নিম্ন স্তরে থাকা অভিবাসীদের বি-টু পর্যায়ে পৌঁছাতে দীর্ঘমেয়াদি ব্যয়বহুল কোর্স করতে হবে — যার সম্পূর্ণ খরচ বহন করতে হবে তাদের নিজেদেরই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ বলেছেন, “যারা এই দেশে আসবেন, তাদের অবশ্যই আমাদের ভাষা জানতে হবে এবং সমাজে অবদান রাখতে হবে। যুক্তরাজ্য সবসময় অবদানকারী অভিবাসীদের স্বাগত জানায়।”
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নেট মাইগ্রেশন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজারে, যা নিয়ন্ত্রণে আনতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নতুন নীতির আওতায় আরও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে —
• নিয়োগকর্তাদের জন্য ইমিগ্রেশন স্কিলস চার্জ ৩২% বৃদ্ধি করা হয়েছে।
• স্বল্প বেতনের ১৮০টি পেশা আর দক্ষ কর্মী ভিসার জন্য যোগ্য থাকবে না।
• বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর পর থাকার সময়সীমা ২ বছর থেকে কমিয়ে ১৮ মাস করা হয়েছে।
লন্ডনের চ্যান্সেরি সলিসিটর্সের কর্ণধার ব্যারিস্টার মো. ইকবাল হোসেন এই সিদ্ধান্তকে “অভিবাসী পরিবারগুলোর ওপর এক বড় আর্থিক বোঝা” বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই নীতির ফলে অনেক দক্ষ কর্মী হয়তো তাদের পরিবারকে যুক্তরাজ্যে আনতে আগ্রহ হারাবেন, কারণ ভাষা ও আর্থিক বাধা তাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠবে।”