ঢাকা, ২৩ আগস্ট ২০২৫:
নিখোঁজ সাংবাদিক ও লেখক বিভুরঞ্জন সরকার-এর মরদেহ মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদ আলম। শনিবার বিকেল ৫টা ৪৪ মিনিটে তিনি বলেন,
“মেঘনা নদীতে একটি মরদেহ পাওয়া গেছে। পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে— তিনি বিভুরঞ্জন সরকার।”
“সত্য লিখে বাঁচা সহজ নয়” — শেষ চিঠিতে হৃদয়বিদারক বার্তা
মৃত্যুর আগে বিভুরঞ্জন সরকার একটি লেখা পাঠান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ। ২১ আগস্ট সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে তিনি মেইল করেন লেখাটি। সেখানে তিনি লেখেন—
“আমি লিখেছি সত্যের পক্ষে, মানুষের পক্ষে, দেশের পক্ষে।
কিন্তু আজ, যখন নিজের জীবনকে দেখি, অনুভব করি— সত্য লিখে বাঁচা সহজ নয়।”
লেখাটির শেষে তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন:
“জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।”
এই লেখাটির পর থেকেই সহকর্মীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়।
নিখোঁজের পর মরদেহ উদ্ধার
বিভুরঞ্জন সরকার সেদিন সকাল ১০টার দিকে অফিসে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। এরপর আর ফেরেননি।
পরিবার থেকে জানানো হয়, খোঁজ না পেয়ে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। দুদিন পর তার মরদেহ উদ্ধার হলো মেঘনা নদী থেকে।
একজন সাহসী সাংবাদিকের শেষযাত্রা
বিভুরঞ্জন সরকার ছিলেন একজন আপসহীন, নির্ভীক সাংবাদিক। দীর্ঘদিন তিনি কাজ করেছেন জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়াতে।
তার লেখায় উঠে আসতো সমাজের অসঙ্গতি, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, এবং নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন কলমে সক্রিয়।
সাংবাদিক মহলে শোকের ছায়া
তার মৃত্যুতে সাংবাদিক ও লেখক সমাজে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই বলছেন:
“এটা কেবল একজন সাংবাদিকের মৃত্যু নয়, বরং সত্য বলার কণ্ঠরোধ।”
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সহ বিভিন্ন সংগঠন তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং মৃত্যুর পূর্ণ তদন্ত দাবি করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে তদন্ত চলছে। আত্মহত্যা, দুর্ঘটনা নাকি অন্য কোনো কারণ— তা জানতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিভুরঞ্জন সরকার আমাদের ছেড়ে গেলেও, তার লেখা এবং সত্যের প্রতি নিষ্ঠা অনন্তকাল ধরে মনে পড়াবে আমাদের— কলম আর বিবেক হারানো এক সাহসী সৈনিককে।