স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় ৫৫০ থেকে ৬০০ জন মাদক কারবারি সক্রিয় থাকলেও স্থানীয়দের ধারণা এই সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। উপজেলার প্রায় ১৮-২০টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অবাধে প্রবেশ করছে মাদকের চালান, যা রেল, সড়ক ও নৌপথে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের নানা প্রান্তে।
হরষপুর, মুকুন্দপুর ও আজমপুর রেলস্টেশন ব্যবহার করে ভিক্ষুক বা হকার সেজে মাদক পরিবহন করা হয়। বর্ষাকালে (৭-৮ মাস) নৌপথ হয়ে এবং বাকি সময় সড়কপথে এই মাদক পৌঁছে যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে। উপজেলার ৩২০ থেকে ৩৫০ স্থানে গড়ে উঠেছে খুচরা মাদক বিক্রির স্পট, যেখানে প্রতিদিন আশপাশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, সরাইল, নাসিরনগর, আশুগঞ্জ, নবীনগর ছাড়াও কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে বহু মানুষ এসে মাদক সেবন করছে।
মাদক পরিবহনে নারীদের জড়িত থাকার তথ্যও পাওয়া গেছে। অনেক নারী শরীরের বিভিন্ন স্থানে মাদক লুকিয়ে পরিবহন করছেন। কেউ পাহারা দিচ্ছেন, কেউ অর্থ লগ্নি করছেন আবার কেউ নিজেই শ্রম দিয়ে মাদক পরিবহনে জড়াচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এই কারবারে সহযোগিতা করছেন এবং কমিশন নিচ্ছেন।
একাধিক মাদক কারবারি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাদক ব্যবসা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও লাভজনক। তবে নতুন যারা এই ব্যবসায় আসে, তারা শুরুর দিকে বেশ লাভ করে। একসময় এসে বিভিন্ন মহলে ভাগ দিতে দিতে তেমন লাভ থাকে না। মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অনেকে এই ব্যবসা চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
মাদক ব্যবসা থেকে ফিরে আসছেন না কেন জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা ফিরে আসতে চাইলেও আমাদের আসতে দেওয়া হচ্ছে না। একজনের নামে একটা মাদক মামলা থাকলে সে মাদক ব্যবসা থেকে দূরে চলে গেলেও তাকে যেকোন মাদকদ্রব্য চালান আটক হলে আসামি করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। কারণ একটা মাদকের চালান আটক হলে সেই চালান তার বলে আশপাশের সবাইকে মামলার ভয় দেখানো হয়। বাধ্য হয়ে মামলা থেকে বাঁচতে তাদের সঙেগ্ সমঝোতা করে চলতে হয়। আর এই সমঝোতা করে চলতে গেলে মাদক ব্যবসা করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই।
বিজয়নগর থানায় ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৮৬টি মাদক মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ৭৫ জন, জব্দ হয়েছে ৭১১ কেজি গাঁজা, ১২৮৬ পিস স্কফ সিরাপ, ৬২৮ বোতল ফেন্সিডিল, ৭২ বোতল বিদেশি মদ ও ১৮,৮৯০ পিস ইয়াবা।
বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কালাছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু ইউছুফ ভূঁইয়া বলেন, এই অঞ্চলের অধিকাংশ নারী-পুরুষ এখন মাদকে জড়িয়ে পড়ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সীমান্ত এলাকার পরিবেশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
বিজয়নগর থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, মাদক নির্মূলে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মাদক জব্দ করা হচ্ছে।