দেশটা যখন অদৃশ্য আগুনে জ্বলছে, তখন কেউ কেউ স্যুট পরে ঠান্ডা কক্ষে বসে হিসাব করছে—কতটা পুড়লে আন্তর্জাতিক চাপ আসবে, কতটা পোড়ালে ক্ষমতা পুনর্বিন্যাস সহজ হবে। মোহাম্মদ ইউনূস এখন আর ব্যক্তি নন, তিনি একটা প্রজেক্ট। যার কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের ভেতরে ধীর বিষ মেশানো। পোশাক বানানোর অর্ডার, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে যোগসূত্র, নিরাপত্তা বাহিনীর বিভাজন—সব মিলিয়ে সে যেন এক ছায়াময় থিংক ট্যাঙ্কের সামনে বসা পাপেটমাস্টার।
চট্টগ্রামে ধরা পড়েছে কেএনএফ-এর জন্য বানানো ২০ হাজার ইউনিফর্ম। সেলাই করা হয়েছিল শহরের মধ্যে, একেবারে ঘরের পাশে। যারা বানাচ্ছিল, তাদের হাতেই ছিল টাকা—দুই কোটি টাকার অর্ডার। অর্ডার এসেছিল পাহাড় থেকে, কেএনএফ-এর এক লিডারের কাছ থেকে। কিন্তু টাকা, যোগাযোগ, প্ল্যান—এসব এসেছিল পাহাড় থেকে না, এসেছিল নিচুভূমি থেকে। ঢাকার অভিজাত লাউঞ্জ থেকে, ইউনূসের পরিধির ভেতর থাকা লোকদের কাছ থেকে।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে ঠান্ডা লড়াই চলছে ইউনূসের। সেনাবাহিনীর ভেতরেই নজরদারি করছে সেনা গোয়েন্দারা। তাদের চোখ এড়িয়ে কিছু যায়নি। তারা জানে, এই ইউনিফর্ম কেবল কাপড় না, এইটা হচ্ছে একেকটা অস্ত্র। যারা এগুলো তৈরি করছিল, তারা কাপড় দিচ্ছিল না—দিচ্ছিল সাহস, দেয়াল টপকানোর লাইসেন্স, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটানা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জ্বালানী।
আর যারা মুখে মুখে মানবতা, বিশ্বব্যাংক, সভ্যতা, তাদের হাতেই এই অপারেশনের ব্লুপ্রিন্ট।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ এই অভিযান চেপে যেতে চেয়েছিল। ‘সাইলেন্ট’ রাখতে চেয়েছিল। কেন? ভয় পেয়েছে? না কি কেউ উপরে ফোন করেছে? কে জানে। কিন্তু সেনা গোয়েন্দারা চুপ ছিল না। তারা চুপ থাকলে হয়তো ইউনিফর্মগুলো পাহাড়ে পৌঁছে যেত। হয়তো একদিন সকালে রুমার পাহাড়ে নয়, ঢাকার মিরপুরেও গুলি চলতো।
এটা কেবল পাহাড়ের সমস্যা না, এটা ঢাকার সমস্যাও। রাষ্ট্রকে নরম হাতে ধ্বংস করা যায়—এই থিওরি অনেক আগে থেকেই ট্রায়াল দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে। ইউনূস সেই থিওরির ফ্রন্টম্যান হয়ে উঠেছেন। নোবেল হাতে নিয়ে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের স্টেজে দাঁড়িয়ে যারা ঝকঝকে ইংরেজিতে বলে “Bangladesh is in a democratic crisis”, তারাই রাতে লোক পাঠিয়ে পাহাড়ে আগুন ধরাচ্ছে।
তারা জানে কীভাবে রাষ্ট্রকে ঘুম পাড়িয়ে, ঘরের ভেতরেই আগুন লাগাতে হয়। তারা জানে মিডিয়ার কাকে কোন কর্নারে নিতে হয়, জানে কোন সাংবাদিককে কোন বোতলে ভরা গল্প দিতে হয়, জানে কোন পুলিশকে থামাতে হলে কে ফোন করে।
এই যে ইউনূস—সে কোনো ব্র্যান্ড না, সে এখন একটা ছদ্মবেশী যুদ্ধযন্ত্র। সে নিজে সরাসরি কিছু করে না, কিন্তু যার ছায়া পড়ে, সেখানে দাউ দাউ আগুন লাগে।
সে রাষ্ট্রের বাইরে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র চালাতে চায়। আগুনটা তাই তাতিয়ে তুলতে হবে। পাহাড়ে হট্টগোল লাগবে, শহরে আতঙ্ক ছড়াবে, মিডিয়ায় গলাবাজি হবে, তারপর পশ্চিমারা বলবে—“ওহ, বাংলাদেশে তো ইনস্ট্যাবিলিটি!” এই রকম একটা খেলা চলতেছে। আর খেলোয়াড় হচ্ছে সেই ইউনূস, যে বিশ্বমঞ্চে উন্নয়নের ফেরিওয়ালা, আর দেশে নিরাপত্তার কফিন বানানো কফিনকারিগর।
এইখানে কোনো কবিতা চলে না। এইখানে সাহস লাগে। কারণ যারা ইউনিফর্ম বানাচ্ছে, তারা কাপড়ের ব্যবসা করছে না—তারা রক্তের ব্যবসা করছে।
সবাই চুপ। কেউ মুখ খুলতে চায় না। সেনা গোয়েন্দারা কাজ করছে, কিছু সাহসী সাংবাদিক খবর কবর দিচ্ছে—তবে বাকিরা কেমন বেমানান নীরবতায় ডুবে আছে। অথচ প্রশ্নটা সোজা—রাষ্ট্র থাকবে, না ছায়ার হাতে চলে যাবে? ইউনূস আর তার দোসরদের থামাতে হলে কেবল রিপোর্ট নয়, দরকার পিঠ সোজা করে দাঁড়ানো। আর না হলে কালকে এই চট্টগ্রাম, পরশু ঢাকায় পোশাক পরা কোনো ‘অচেনা সেনা’ গুলি ছুঁড়বে, তখন আর কাপড়ের রঙ দেখে বোঝা যাবে না কে দেশের, কে বেঈমান।